Pregnancy Journey
4 April 2023 আপডেট করা হয়েছে
আধুনিক যুগে মানুষ অনেকাংশেই বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল, আবার একথাও ঠিক, বিজ্ঞান সবকিছুকেই অনেক বেশি বিপন্মুক্ত, সুরক্ষিত, এবং সুনিশ্চিত করেছে। কিন্তু মজার বিষয় এমন অনেক লোকাচার বাঙালি সংস্কৃতিতে বহুকাল আগে থাকতেই আছে যেগুলো শুধুমাত্র লোকাচারের নামেই পরবর্তী প্রজন্ম জেনেছে বলে তাদের উৎসাহ সেসব লোকাচারে ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে। আজ কিছু এমনই লোকাচার নিয়ে আলোচনা হবে - যেখানে বোঝা যায় যে প্রত্যেকটি লোকাচারের পেছনে কিছু না কিছু যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। লোকাচার মানেই শুধুমাত্র কুসংস্কার বা অযৌক্তিক কিছু আচার পালন নয় বরং বিজ্ঞানের মতোই লোকাচারেও যথেষ্ট কারণ আছে বা থাকতে পারে।
আপাতদৃষ্টিতে দেখতে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আধুনিক যুগের যুক্তিসংগত মন প্রশ্ন করবে সন্ধ্যের মধ্যে বাড়ি ফেরার দরকারই বা কি আর যুক্তিই বা কি? এখনকার দিনের বেশিরভাগ নারী শুধুমাত্র সাংসারিক জীবনে নয়, পেশাদারী জীবনেও নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বা করছে; সে ক্ষেত্রে সন্ধ্যেয় ঘরে ফেরা বা ঘরে থাকা এ ধরনের যুক্তি বড়ই জোলো। কিন্তু একটু বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ডাক্তারি মতে গর্ভবতী মহিলারা সাধারণত শারীরিকভাবে দুর্বল হয় এবং যেকোনো রোগ-অসুখ খুব চট করে আক্রমণ করতে পারে। আবার উল্টোদিকে, সন্ধ্যেবেলা যে কোন পরিবহনে ভিড় অনেক বেশি থাকে যা গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে মোটেই খুব একটা উপযোগী নয়। এখন এটা ধারণা করা ভুল হবে যে, প্রত্যেকের কাছে ব্যক্তিগত গাড়ি থাকবেই। তাই নিজের এবং আগত সন্তানের সুস্থতা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই লোকাচার যুক্তিযুক্ত। কিন্তু এতো গেল এখন কার কথা। আগেকার দিনে কটা নারী বা বাইরে কাজ করতে যেত? সংখ্যা প্রায় শূন্য ধরলেও চলে। তাহলে এই লোকাচারের কি কারণ? আগেকার দিনের নারীরা বাইরে পেশাদারী কাজ করতে যেত না একথা যেমন ঠিক, তেমনই আগেকার দিনে বেশিরভাগ নারীদেরই বাসন ধোয়া, নিজের পরিচর্যা সবকিছুর জন্যই বাইরে পুকুরে যেতে হতো। শারীরিক দুর্বলতার জন্য সন্ধ্যের অন্ধকারে কোন বিপদ যদি হয়ে যায়, তাহলে কেউ টেরও পাবে না। তাই বিপদের সম্ভাবনা যতটা সম্ভব কমাবার জন্যই এ ধরনের লোকাচার। আবার এ কথাও ঠিক, হবু মায়ের বিশ্রামের খুবই প্রয়োজন যা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে খুব একটা গ্রাহ্য হত না। এই লোকাচারটা একভাবে গর্ভবতী মহিলাকে বিশ্রামের সুযোগ ও করে দেয়।
মা - ঠাকুমার কথা অনুযায়ী গর্ভবতী মহিলাদের চুল খুলে রাখা উচিত না। আগেকার দিনে হাওয়া লাগার ঘটনা খুব বেশি পরিমাণে ছিল এবং তাদের ধারণা এই সময়ে কোন খারাপ হাওয়া বা অশুভ শক্তি খুব তাড়াতাড়ি প্রভাব ফেলতে পারে যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খোলা চুলের মাধ্যমে সম্ভবপর। তাই চুল বেঁধে রাখা বা নিতান্ত পক্ষে চুলে একটা গেট দিয়ে রাখা তাদের মতে করণীয়। এ যুক্তি এখনকার দিনে আধুনিক যুবসমাজের কাছে মোটেই খাটে না। যুক্তিযুক্তভাবে বলা যায়, চুল বেঁধে রাখার কারণ হতে পারে চুলের যত্ন নেওয়া এবং যতটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। গর্ভাবস্থায় হরমোন খুব দ্রুত পরিবর্তন হয় এবং তার জন্য অনেক মহিলার ক্ষেত্রেই চুল পাতলা হয়ে যায় এবং প্রচুর চুল পড়ে। এখানে সেখানে চুল পড়া হবু মায়ের পক্ষে বা কারোর পক্ষেই খুব একটা ভালো নয়। এবং এতে বাড়িও নোংরা হয়। বেঁধে রাখলে বরং চুলটা ভালো থাকতে পারে। এ প্রসঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার যে, যেকোনো মহিলা হাসপাতালে থাকাকালীন যদিও বা চুল খুলতে পারে কিন্তু শল্যচিকিৎসার সময়ে আয়ারা সুনিশ্চিতভাবেই চুলটা বেঁধে দেয়। তাই এক্ষেত্রে বলাই যায় যে চুল খুলে না রাখা বা এই লোকাচারটি সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক নয়। হয়তো আগেকার যুক্তিটা এখন চলে না কিন্তু যুক্তির হেরফেরেও চুল বেঁধে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
লোকাচারে বলা হয় গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে শাড়ির আঁচলে একটা গেট দিতে হবে। আক্ষরিক অর্থে বা আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে এটা খুবই একটা আজগুবি ঘটনা। কিন্তু একটু তলিয়ে ভাবলে দেখা যাবে এর পেছনেও যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত কারণ আছে। সেই সময় খুব কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে হত এবং খুব তাড়াতাড়ি তাদের বাচ্চা হত! তো সেক্ষেত্রে শাড়ি সামলানো তাদের পক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই অসুবিধা হয়ে যেত। কোল আচল অনেক সময় একটু বেশি বেরিয়ে থেকে হোঁচট খাওয়ার মতন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। একজন গর্ভবতী মায়ের যাতে এই ধরনের অসুবিধা না হয় এবং এই ধরনের অসুবিধার জন্য কোন বিপদ না হয় তাই জন্যেই আঁচলটি ছোট করার জন্য এই গেটটা দিতে বলা হত। এখনকার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলেও ঘটনাটা একই দাঁড়াবে। কোন গর্ভবতী মহিলা যদি শাড়ি পরে তার পেশাদারিত্বের বা নিজস্ব জগতের কোন কাজ করতে যায়, তো সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বাঙালি লোকাচারে এ সময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভবতী মহিলাদের বাইরের খাবার খেতে দেন না এই অজুহাতে যে বাইরের খাবারের ঋণাত্মক শক্তির প্রভাব থাকতে পারে যা গর্ভবতী মহিলা এবং আগত সন্তানের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে। এক্ষেত্রেও বলা যায় এ যুক্তি এই একবিংশ শতাব্দীতে একেবারেই অচল। কিন্তু যুক্তি অচল হলেও লোকাচারটা কি একেবারে ফেলে দেওয়া যায়? মনে হয় না। কারণ শুধুমাত্র লোকাচার এই যে বলা হয় বাইরের খাবার খাওয়া চলবে না তা নয়, চিকিৎসা বিদ্যাও একই কথা বলে যে - গর্ভবতী মহিলাদের বাড়ির কম তেল-ঝাল-মসলা ওয়ালা খাবার ই সবথেকে ভালো। তাহলে কি কারনে এ ধরনের কথা চিকিৎসা বিদ্যায় বলা হয়,! নিশ্চয়ই কোন যুক্তি আছে। যুক্তিটা এটাই যে বাইরের খাবার প্রথমত কোনভাবেই কম তেল ঝাল মসলা যুক্ত হয় না এবং গর্ভাবস্থায় শরীর যেহেতু বিভিন্ন রকম পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় তাই খুব ভারী খাবার বা তেল মশলা জাতীয় খাবার সহ্য না হওয়ার সম্ভাবনা টাই বেশি এবং সে ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। আবার এ কথাও ঠিক বাইরের খাবার কখনোই বাড়ির মতন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে বানানো হয় না অনেক ক্ষেত্রে বাসি জিনিসও থাকে যা গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে একেবারেই উচিত না। তাই চিকিৎসা বিদ্যা তে বারবার করে উল্লেখ করা হয় যে গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে একদম শুরুর দিকে বাড়ির খাবার ছাড়া কোন খাবারই না খেতে।
এই আলোচনা এটাই প্রমাণ করে যে, লোকাচার মানেই তা কুসংস্কারযুক্ত বা যুক্তিহীন তা নয়, বরং আধুনিক সমাজের প্রতিভূ হয় গর্ভবতী মহিলাদের উচিত খুঁজে বের করা যে প্রত্যেকটি লোকাচারের পেছনে কোন যুক্তিযুক্ত কারণ আছে কিনা এবং লোকাচারটি সত্যিই বাতিল করা উচিত কিনা। নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষা করাও প্রত্যেকটি জাতির ধর্ম; কারণ সংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে প্রত্যেকটা জাতি বেঁচে থাকে। তাই কোন লোকাচার কে বাতিলের পর্যায়ে ফেলার আগে একটু বিচার বিশ্লেষণ করে নেওয়াই ভালো। আবার অন্যদিক দিয়ে দেখতে গেলে বাড়ির বয়স্ক মানুষেরাও গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে অনেক রকম সংস্কার মেনে চলেন। এই লোকাচারগুলোকে মানার মধ্যে দিয়ে তাদের প্রতিও বা তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করা যায়।
Yes
No
Written by
Atreyee Mukherjee
Get baby's diet chart, and growth tips
Mylo wins Forbes D2C Disruptor award
Mylo wins The Economic Times Promising Brands 2022
At Mylo, we help young parents raise happy and healthy families with our innovative new-age solutions:
baby test | test | baby lotions | baby soaps | baby shampoo |