Baby Care
4 April 2023 আপডেট করা হয়েছে
বাঙালি লোক কাহিনীতে মাতৃত্বের চারটি বৈশিষ্ট্য।
বাঙালি লোক কাহিনী শিশুর বেড়ে ওঠায় মাতৃত্ব এবং পারিপার্শ্বিক সমাজকে চারটি ধারায় বিভক্ত করে সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছে। প্রত্যেকটি ধারার বৈশিষ্ট্য এখনকার দিনের বেশিরভাগ পরিবারই ছোট পরিবার যেখানে শুধুমাত্র বাবা-মা এবং তাদের বাচ্চা থাকে। এইরকম পরিবারে মায়ের সংজ্ঞাটি শুধুমাত্র একটা ছোট গণ্ডির মধ্যে বা বাচ্চাটির পরিচর্যাতেই সীমাবদ্ধ থাকে।
বড় পরিবার বা যৌথ পরিবার যদিও সংখ্যায় কম কিন্তু তাও বাঙালি সংস্কৃতিতে এখনো যৌথ পরিবারের উল্লেখযোগ্য অবদান। সবথেকে বড় কথা, এই পরিবারগুলি বনেদিয়ানায় যে কোন ছোট পরিবারকে অনায়াসে শিক্ষনীয় উদাহরণ দিতে পারে। এরকম পরিবারে মা শুধুমাত্র তার নিজের বাচ্চার মা হিসাবে পরিচিত থাকেন না বরং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে বাচ্চাগুলো একসাথে বড় হচ্ছে এবং মা-বাবার প্রত্যক্ষ আদর বা ভালোবাসার থেকে যৌথভাবে তারা সব রকমের আদর, ভালোবাসা, শাসন ইত্যাদি পেয়ে থাকে। এইরকম পরিবারে অনেক সময়ই মায়ের পরিচয় শিশুর কাছে অনেক বড়রূপে ধরা পড়ে। যেমন শিশুটি ছোট থেকেই বুঝতে পারে যে তার মা শুধুমাত্র তার অধিকৃত সম্পত্তি নয় বরং কারুর বৌমা, কারোর দিদি বা বোন, বা কারোর কাছে বৌদি - এই ধারণাটা ছোট থেকেই সেই শিশুটিকে মানসিক দিক থেকে বড় করে তোলে এবং নিজের কাজ সে নিজেই করে নিতে পারে। তাই যৌথ পরিবার এক অর্থে শিশুকে অনেকটাই বড় এবং স্বনির্ভর করে বড় করে। শুধুমাত্র যে পারিবারিক সম্পর্কের মধ্য দিয়েই সে মাকে চেনে তাই নয়, বরং পারিবারিক সম্পর্কের বাইরেও সে তার মায়ের পরিচিতি দেখতে পায়। যেখানে তার মা হয়ে ওঠে বাড়ির সব রকম সহায়কদের কর্তৃ বা গিন্নি। এ প্রসঙ্গে এটাও বলে রাখা ভালো যে, অনেক সময়ই ছোট পরিবারে মা যে শিক্ষাটা শিশুকে অনেক বলেও দিতে পারেনা, সেটা বড় পরিবারে শিশু আপনা আপনি শুধুমাত্র দেখে শিখে যায়। ছোট সংসারে মাকে বাচ্চাকে শেখাতে হয় বিভিন্ন মূল্যবোধের কথা। যেমন নিজের থেকে বয়সে বড় যে কোন সদস্যকেই তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু বড় সংসারে মায়ের ব্যবহারই বাচ্চাটিকে শিখিয়ে দেয় যে কার সাথে ঠিক কিরকম ভাবে কথা বলতে হবে। রবীন্দ্রনাথ যে কোন বাঙালির আদর্শ। রবীন্দ্রনাথ একজন যৌথ পরিবারের সদস্য ছিলেন এবং তাদের ছোটবেলাটা তাদের মা বাবার কাছ থেকে বেশিরভাগই বাড়ির ভৃত্যের কাছেই কেটেছে আর সেই জন্যেই তারা ছোট থেকেই শিখে গেছেন যে প্রত্যেক মানুষেরই একটা সম্মান আছে এবং সেই সম্মান দিয়েই তার সাথে কথা বলা উচিত। এই মূল্যবোধ একটা ছোট সংসারে যেখানে শুধু বাবা, মা, আর বাচ্চা থাকে তাকে শেখানো অনেকটাই সময় সাপেক্ষ এবং জটিল হতে পারে। বাচ্চারা যে কোন জিনিসই উদাহরণের মাধ্যমে বেশি তাড়াতাড়ি শেখে। যৌথ পরিবারে যেহেতু উদাহরণের অভাব হয় না, তাই শিক্ষাটা অনেক তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। কিন্তু ছোট পরিবারে উদাহরণের মতন কোনো সুযোগ থাকে না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চার সামাজিক শিক্ষা হতে দেরি হয়। যৌথ পরিবারে একটি বাচ্চা ছোট থেকেই সবকিছু ভাগ করে নিতে শিখে যায় - সর্বোপরি তার মাকেও সে ভাগ করতে শিখে যায় কারণ তার মা কারোর কাছে কাকিমা, জেঠিমা, মাসিমা, অথবা পিসিমা। আর প্রত্যেকটা শব্দের শেষেই যেহেতু মা আছে তাই বাচ্চাটির কাছেও এটা খুব পরিষ্কার হয়ে যায় যে তার মা তার কাছে যতটা আপনার, তেমনি অন্যান্য সম্পর্ক গুলোর ক্ষেত্রেও ততটাই কাছের। তাই সে এটা বুঝতে শিখে যায় যে, তার মা সব সময় যে তাকে সময় দিতে পারবে বা দেবে তা নয়, বরং তার আরো অনেক সম্পর্ক থাকতে পারে যেখানে তাকে সময় দিতে হয় তাই যৌথ পরিবারের বাচ্চা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উদার মনষ্ক হয় এবং তার মধ্যে কোন জিনিস কাউকে দেব না এই টাইপের মনোভাব খুব একটা দেখা যায় না।
এই ক্ষেত্রটাতে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম থাকে কারণ মেয়েরাই যেকোনো সম্পর্ককে সুন্দরভাবে বেঁধে রাখে বা মেনে চলে। সামাজিক অবস্থানে একটা বাচ্চা তার মাকে দেখে বিভিন্ন আলাদা আলাদা ভূমিকায় এই ভূমিকা পালনের মাধ্যমে মা বাচ্চাটিকে এটা বুঝতে সাহায্য করে যে মানুষ সামাজিক জীব এবং সমাজ ছাড়া একা একা মানুষ বাঁচতে পারে না। এই সামাজিক পরিসরে বাচ্চাটি দেখতে পায় যে, মা যেমন পরিবারের জন্য সময় দেয় ঠিক সেরকমই মা বাইরের কিছু কাজ যেগুলো বাড়ির আভ্যন্তরীণ কাজের সঙ্গে খুব বেশি রকমের জড়িত সেই সব কাজেও সময় দেয়। এটা বাচ্চাকে এটা শিখতে সাহায্য করে যে জীবনে সাম্য বজায় রাখা খুবই জরুরী। শিশুটি যেহেতু এটা দেখে বড় হয় যে মা একাধারে ঘরের সমস্ত কাজ যেমন রান্না, ঘর গোছানো ইত্যাদি করছে, ঠিক সেরকমই বাইরের কাজ যেমন ধোপাকে কাপড় দেওয়া, সবজি বা ইত্যাদির বাজার করা, বয়স্ক দাদু ঠাকুমাকে নিয়ে প্রয়োজনীয় জায়গায় যাওয়া ইত্যাদিও করছ, তখনই শিশুটি বুঝতে পারে যে এমন ভাবেই জীবনকে সাজাতে হবে যাতে করে সামাজিক বা পারিবারিক কোনো ক্ষেত্রই প্রভাবিত না হয় বরং দুটো ক্ষেত্রে একটা অদৃশ্য অথচ সুন্দর যোগাযোগ থেকে যায়। সামাজিক বন্ধনে শুধু যে বাইরের লোকজন পড়ে তাই নয় বরং শিশুটি এটাও দেখতে পায় যে পরিবারের বাইরেও একটি পরিবার থাকতে পারে। সাধারণত একটি শিশু তার পরিবারে বাবা-মা, কাকা, জ্যাঠা, কাকি, জেঠি, ভাই, বোন, দাদু, ঠাকমা ইত্যাদির সান্নিধ্যে বড় হয়। কিন্তু পরিবারের বাইরের পরিবারে সে পরিচিত হয় তার মাসি, মামা, দিদা, দাদু, পিসি, পিসেমশাই, মেসোমশাই, মাইমা ইত্যাদি মানুষগুলোর সাথে এবং চলার পথে বড় হয়ে উঠতে উঠতে আস্তে আস্তে সে বুঝতে পারে তার বাবা এবং মায়ের পরিবারের যোগসূত্র। এটি শিশুকে এটাও বুঝতে সাহায্য করে যে, পারিবারিক বন্ধন একটা খুব সুন্দর কিন্তু জটিল জিনিস এবং তার জন্য যথেষ্ট সময়ে দিতে হয় ও পরিচর্যা করতে হয়। এই মূল্যবোধগুলো একজন মা-ই তার সামাজিক স্তরে ভূমিকার মাধ্যমে শিশুকে বুঝতে সাহায্য করে। তাই মাতৃত্ব বাঙালি সমাজে শুধুমাত্র শিশুর মা হিসাবে বিবেচিত হয় না বরং একজন এমন মানুষ হিসেবে প্রতিপন্ন হয় তার শিশুর কাছে যে একাধারে যেমন মুশকিল আসান তেমনি সব পেয়েছি দেশ।
বাঙালি সংস্কৃতিতে দেব-দেবীর একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান আছে। এই দেবদেবীর মধ্যেই আবার হিন্দু শাস্ত্রে যতরকম দেবী আছেন তারা সবাই মাতৃরূপে পূজিত হন। তাই সংস্কৃত শ্লোকে আছে মাতৃরূপেন সংস্থিতা নমস্তসৈ নমস্তস্যৈ নমস্তাই নমো নমহ। যে দেবীরই পুজো হোক না কেন, বাঙালিরা অবশ্যইভাবে তাকে মায়ের আসনে বসিয়েই পুজো করেন। দেবী দুর্গাও যেমন দুর্গা মা, তেমনি লক্ষ্মী বা সরস্বতী মা লক্ষ্মী বা মা সরস্বতী হিসেবে বাঙ্গালীদের মধ্যে পূজিত হন। এই মাতৃরূপের সংজ্ঞা আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন বা বলা যায় এই মাতৃরূপে প্রভাবই বাস্তব জীবনে পড়ে। তাই শিশুরা তাদের মাকে বিভিন্ন রূপে চিনতে শেখে। দেবী দুর্গা বা দুর্গা মা হচ্ছেন শক্তির দেবী, ন্যায়ের দেবী। তাই যখন কোন শিশু কোন দুষ্টুমি করে বা বদমাইশি করে তখন অনেক ক্ষেত্রেই তার মা তাকে সঠিক পথ দেখাবার জন্য শক্তির প্রয়োগ করে থাকেন। এখানে দুর্গা মা এবং মৃন্ময়ী মা দুজনেই সন্তানের কাছে একই রূপে ধরা পড়ে। আবার অন্যদিকে অনেক সময় একটি সন্তান দেখে যে তার মা সাংসারিক জীবনে খুব গোছানো তা থেকেই তাকে লক্ষী রূপে আখ্যায়িত করে কারণ মা লক্ষ্মী বাঙ্গালীদের কাছে সম্পদ ধন দৌলত ইত্যাদির দেবীরূপে পূজিত হন। তাই বাচ্চাদের কাছেও তার মা হয়ে ওঠে মা লক্ষ্মীরই বাস্তব রূপ যিনি তার সন্তান এবং পরিবারের জন্য মা লক্ষ্মী স্বরূপ। এ থেকে সন্তানটি বুঝতে পারে যে মা কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকুক বা না থাকুক, মাইনে পাক বা না পাক, প্রয়োজনে সে সবসময়ই লক্ষ্মীর ভান্ডার হিসেবে উপস্থিত। আবার কোন কোন শিশু দেখে যে তার মা পড়াশুনা, নাচ, গান বা আঁকায় অসম্ভব পারদর্শী এবং প্রত্যেকে তাকে বলে তার মধ্যে মা সরস্বতীর অধিষ্ঠান। এ থেকে বাচ্চাটি তার মাকে বিদ্যাবুদ্ধির অধিষ্ঠান হিসেবে চিনতে শেখে - যেখানে মা মানে শুধুমাত্র আবদারের জায়গা নয়, বরং মা মানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শিক্ষয়িত্রী।
বাঙালি লোক কাহিনীতে যদিও মায়ের এই চারটি রূপের কথাই বলা হয়েছে, তাও বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সর্বতোভাবে একজন মা তার শিশুর ক্ষেত্রে সবথেকে বড় শিক্ষইত্রী। জীবনের শুরুতে প্রথম শিক্ষা একটা শিশু তার মায়ের কাছ থেকেই পায়, আর পরবর্তীকালে সে যতই বড় হয়ে যাক না কেন জীবনের শিক্ষা তার মায়ের থেকে বেশি ভালো কেউ দিতে পারে না। তাই বাঙ্গালীদের কাছে মাতৃত্ব বা মা শুধুমাত্র সন্তানের মা হিসাবেই পরিস্ফুট হয় না বরং শিশুর কাছে মায়ের বিভিন্ন রূপ আলাদা আলাদা অবস্থান বা পারিপার্শ্বিকের মধ্যে দিয়ে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে।
Yes
No
Written by
Atreyee Mukherjee
Get baby's diet chart, and growth tips
গর্ভাবস্থায় সবেদা খাওয়া কি উচিত?
বাঙালি জাতি: সমাজে কর্ম, ভূমিকা, এবং অবস্থান
বাঙালি সংস্কৃতিতে মাতৃত্ব
প্রাচীন বাংলায় মাতৃত্ব
বাঙালি লোকাচারে সন্তান এবং মাতৃত্ব
শিশুর মুখের ক্ষত বা মাউথ থ্রাশ
Mylo wins Forbes D2C Disruptor award
Mylo wins The Economic Times Promising Brands 2022
At Mylo, we help young parents raise happy and healthy families with our innovative new-age solutions:
baby test | test | baby lotions | baby soaps | baby shampoo |