Preparing For Delivery
4 April 2023 আপডেট করা হয়েছে
গবেষক আলতেকারের মতে 'মাতৃত্বের ওপরে দেবত্বের আরো ভারতবর্ষে যেমন উচ্চতম পর্যায়ে পৌঁছেছিল, এমন আর কোথাও নয়'। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এই দেবত্বের আরোপ সমাজে নারীর অবস্থানের চিত্র প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ হতে পারে। এটা থেকে বোঝা যায় মায়ের প্রতি সমাজের নিশ্পৃহতা; তবে একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, বাঙালি সমাজে মাতৃত্বের এক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা। বাঙালি লোকাচারে মাতৃত্ব আবশ্যিক। একটি মেয়েকে জন্মের পর থেকেই শেখানো হয় ভালো স্ত্রী এবং সর্বোপরি ভালো মা হওয়ার জন্য। বাঙালি লোকাচারে একটা মেয়েকে সবসময়ই একাধিক পুত্রের জননী হওয়ার জন্য আশীর্বাদ দেওয়া হতো। এই প্রসঙ্গে বাঙালী সাহিত্যের অবতারণা এই মন্তব্যটিকে সুদৃর ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। অভিজ্ঞান শকুন্তলম নাটকের চতুর্থ অঙ্কে তপস্বিনীরা গর্ভবতী মেয়েটিকে আশীর্বাদ করেন সে যেন বীরপ্রসবিনী সম্মানটি লাভ করে। এখন দেখা যাক গর্ভাধান এবং গর্ভধারণ অনুষ্ঠানগুলির তাৎপর্য।
বিবাহ অনুষ্ঠানের কিছু পরেই নব দম্পতি প্রার্থনা করতেন যেখানে বধু শুধুমাত্র নিরব সমর্থন জানোতো স্বামীর উক্তিতে 'এসো আমরা মিলিত হই, যাতে আমরা পুত্র সন্তান লাভ করতে পারি, সম্পত্তির বৃদ্ধির প্রয়োজনে পুত্রলাভ করতে পারি।' এ সঙ্গে বর আরো প্রার্থনা করতেন 'পুত্র, পৌত্র, দাস, শিষ্য, বস্ত্র, কম্বল, ধাতু, পত্নী, রাজা, অন্ন, নিরাপত্তা।' অন্যদিকে বধূর পক্ষ থেকে শুধুমাত্র প্রার্থনা করা হতো যে, সে যেন কখনোই কোল শূন্য অবস্থায় না থাকে - যা থেকে এটাই বোঝা যায় যে তার কোলে সন্তান যেন সবসময় থাকে। তাই বাঙালি লোকাচারে বিবাহের মূল কারণ সে সময় ছিল পুত্র সন্তান লাভ। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় যেহেতু একজন পত্নী শুধু যে পুত্রসন্তানই প্রসব করবে এরম নাই হতে পারে, তাই কোন ঝুঁকি না নিয়ে বহু পত্নীর অবতারণা অনেক বর করতেন এবং বহু পত্নীর প্রার্থনা সে নববিবাহিত বধুর সাক্ষাতেই করতেন এবং সামাজিকভাবে এটাই আশা করা হতো যে বধু সেই প্রার্থনা মেনে নেবেন কারণ পুত্র সমৃদ্ধি, বৃদ্ধি, বংশ রক্ষা, সম্পত্তি সবকিছুর জন্যই প্রয়োজনীয়।
গর্ভাধান অনুষ্ঠানটি মূলত পুত্র সন্তানের কামনায়, যার উল্লেখ অথর্ববেদে পাওয়া যায়। শুধুমাত্র অথর্ববেদ না, উপনিসদেও বিভিন্ন রকম সন্তান লাভের জন্য স্বামীর স্ত্রীকে কি কি খাওয়ানো উচিত তার নির্দেশিকা দেওয়া আছে। এক্ষেত্রে প্রার্থনা শুরু হয় 'এস আমরা দুজনে মিলে পুত্র সন্তান লাভের চেষ্টা করি।' মনে রাখা ভালো, এক্ষেত্রে স্ত্রী শুধুমাত্র গ্রহীতা এবং তার কিছুই করার কোন অনুমতি বা সুযোগ নেই। এমনকি তার নিজের মন্তব্য প্রকাশ করা বা কথা বলারও স্থান নেই। গর্ভবতী হওয়ার পরে দুটো অনুষ্ঠান হয়। পুত্র সন্তানই যাতে হয় তার জন্য পুংসবন আর সিঁথিভাগ করার জন্য সীমাস্তোনয়ন। পুংসবন নামটি পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেয় এই অনুষ্ঠানের তাৎপর্য: যেখানে পুত্র লাভই মূল উদ্দেশ্য। সব অনুষ্ঠান গুলি বা প্রার্থনা গুলি খুব পরিষ্কারভাবে কন্যা সন্তানের বিরোধী বলে বোঝা যায়। সিমাস্তনয়ন প্রক্রিয়াটি তুলনামূলকভাবে আরো জটিল। একজন নারী, যিনি সধবা এবং সন্তান গরবে গর্বিত তিনি গর্ভবতী মহিলার সামনে নাচবেন, বিনা বাজাবেন এবং গান গাইবেন। এরপর ভাতের একটি পিণ্ড সেই গর্ভবতী মহিলার সামনে ধরা হবে এবং স্বামী জিজ্ঞাসা করবে সে কি দেখছে; উত্তর দিতে হবে সন্তান এবং তার পরবর্তী সে আশীর্বাদ পাবে 'অবিধবা হও, বীর প্রশবিনী হও'। ভরদ্বাজূত্র অনুযায়ী তিনটি রান্না করা ভাতের পাত্র রেখে এই একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হলে বধুকে উত্তর দিতে হয় পশু ও পুত্র। আবার জৈমনীয় গৃহসূত্র অনুযায়ী কচুসার পাত্রে জল ভরে তার মধ্যে সোনা রাখা হয় এবং বধুকে কি দেখছে প্রশ্নটি করা হলে বধূ বলে 'স্বামীর জন্য দীর্ঘ জীবন, আমার জন্য সৌভাগ্য এবং সন্তান ও পশু'। মজার বিষয় এই যে, বাঙালি লোকাচারে তদানীন্তন কালে মাতৃত্বের অপরিসীম গুরুত্ব থাকলেও মায়ের বা গর্ভবতী নারীর জন্য কোন প্রার্থনাই নেই। আর সেই প্রসঙ্গেই এটাও মনে রাখা দরকার যে, চিকিৎসা শাস্ত্রের অভাবের জন্য এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তার না থাকায়, প্রসবত্তর মৃত্যুর হার সেই সময়ে এখনকার তুলনায় অনেক বেশি ছিল। তাও শুধুমাত্র স্বামীর দীর্ঘ জীবনের কামনাই শোনা যায়। এর ব্যাখ্যা প্রার্থনায় পত্নী শব্দের যে বহুবচন ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে পাওয়া যায়। বলা হয়েছে যে, সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে যদি পত্নীর মৃত্যু হয়, তবে স্বামী আরেকটি বিবাহ করবেন এবং শাস্ত্রসম্মতভাবে স্ত্রী এর সৎকারের ঠিক পর দিনই স্বামী বিবাহ করতে পারবেন। সংখ্যায়ন গৃহসূত্র অনুযায়ী যে নারীর স্বামী এবং সন্তান বেঁচে আছে সে নবপরীণীতা কে মদ ও নিরামিষ খাদ্য দেবে এবং তারপরে গান-বাজনা নাচ ইত্যাদি করবে। আর এ সবকিছুই শুধুমাত্র পুত্র সন্তান লাভের আশায়। ঋগ্বেদ অনুসারে গর্ভধারণের অনুষ্ঠানটির নাম উদরামাময়ং। গর্ভাবস্থার চতুর্থ মাসে স্বামী তার স্ত্রীর চুল সজারুর কাঁটা দিয়ে আচড়ে দেয় যা কিনা ভুমিতে হলকর্ষণের প্রতীক। এর সঙ্গে একগুচ্ছ ফল জোড় সংখ্যায় দেয়, যেটি অসম্পূর্ণ ভ্রূণের প্রতীক। তারপর গান বাজনা হয় যাতে ভ্রুন ধ্বংসকারিনী রাক্ষসীদের তাড়ানো যায় এবং সবশেষে ঘৃতের দিকে তাকিয়ে যখন প্রশ্ন করা হয় যে গর্ভবতী মহিলা কি দেখছে, সেখানে উত্তর করতে হয় সন্তান।
পুরো পদ্ধতি বা অনুষ্ঠানে গর্ভবতী মহিলার ভূমিকা শুধুমাত্র আজ্ঞা পালন এমনকি উত্তরটিও তাকে নির্দেশ মতন দিতে হয়।
গর্ভধানের পরের অনুষ্ঠান হল পুংসবন যেটির উল্লেখ অথর্ববেদে পাওয়া যায় যদিও অনুষ্ঠানের অনুপুংখগুলি বাঙালি সাহিত্যে পাওয়া যায়। বাঙালি সাহিত্য থেকে এ কথা জানা যায় যে, গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাসে গর্ভবতী একদিন উপোস করার পর তার স্বামী তাকে খেতে দেন ভাত এবং দুটি সিম, এক দানা যাব, এক গ্লাস দই। তারপর স্ত্রীকে স্বামী যখন জিজ্ঞাসা করে তুমি কি পান করবে? স্ত্রী উত্তর দেন পুংসবন। গর্ভাবস্থায় কখনো কখনো অনবলবন নামে একটি অনুষ্ঠান করা হয় যার উদ্দেশ্য গর্ভপাত নিরোধ। এই অনুষ্ঠানের কথা আসিলায়ন গৃহসুত্র থেকে পাওয়া যায়
প্রসবের সময় যত কাছে এসে যায় তখন অর্থাৎ ঠিক জন্মের আগে শোস্যমভীকর্ম নামে একটি শেষ অনুষ্ঠান করা হয়। এটি বাঙালি লোকাচারের একটি অত্যন্ত প্রাচীন অনুষ্ঠান। সন্তানের আগমনের সময়ে সমাজ ও পরিবারের মধ্যে একটি নাটকীয় টানটান ভাব থাকে এবং এই অনুষ্ঠানটি তারই চিত্র বহন করে। প্রসবের ঠিক আগের মুহূর্তে স্বামী স্ত্রীর ওপর জল ছিটায় এবং প্রসব না হওয়া অব্দি এটি ক্রমান্বয়ে চালিয়ে যেতে থাকে।
শিশুর জন্মের ঠিক মুহূর্ত থেকে জন্মের পর অবধি প্রধান লক্ষ্য হলো দুষ্ট প্রেতদের দূরে রাখা কারণ এরা সদ্যজাতর ক্ষতি করে এমনকি প্রাণ নাশেরও কারণ হতে পারে। তাই জাতকর্ম অনুষ্ঠানটিতে সুতিকাগ্নীর উল্লেখ আছে। জন্ম সংস্কারের জন্য এই অনুষ্ঠানটিতে আগুনে সরষে ও তুষ আহুতি হিসেবে দেওয়া হয় এবং এটি ১১ বার দেওয়া হয়। এই আহুতি সদ্যজাতর পিতা দিয়ে থাকেন এবং তার সঙ্গে গোপন নামটি অস্পটভাবে উচ্চারণ করেন যেটি শুধুমাত্র পিতা-মাতাই জানে। এর পরে শিশুটির বাবা সোনা এবং অন্যান্য মাঙ্গলিক দ্রব্য শিশুর মুখে ছুঁয়ে তাকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আগে মধু ও ঘি খাওয়ান এর পরেই শিশুকে দেওয়া স্তন্যপান করতে দেওয়া হতো।
যদিও বাঙালি লোকাচারে মায়ের কোনরকম অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায় না কিন্তু যেহেতু মাতৃত্ব একমাত্র একজন নারী সমাজকে উপহার দিতে পারে, তাই গর্ভবতী নারীদের খাদ্যের ক্ষেত্রে বাঙালি লোকাচারে যথেষ্ট সচেতনতার প্রকাশ দেখা যায়। লোকাচারে বলা হয়েছে গর্ভবতী নারীকে অতিথির আগে খেতে দিতে হবে। যদিও শাস্ত্র অনুযায়ী 'অতিথি দেবো ভব', তাহলে বোঝাই যাচ্ছে পুত্র সন্তান সেই সময় বাঙালি সমাজের ক্ষেত্রে ঠিক কতটা প্রয়োজনীয়। পুত্রের জন্মাবার পর থেকে তার কৈশোরকাল পর্যন্ত তাই বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হতো
এ প্রসঙ্গে প্রথম অনুষ্ঠানটি হত বিষ্ণুবলি। তারপরে মেধা জনন এবং পরবর্তীকালে নামকরণ। নামকরণের পরেই বাবা সন্তানটিকে আঁতুর ঘরের বাইরে নিয়ে আসতেন বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে তার সংস্রবের জন্য। শিশুর প্রথম ভাত খাবার অনুষ্ঠানটি অন্নপ্রাশন যেখানে তার দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়; এবং শিশু যখন শিক্ষা শুরু করে তখন তা হয় বিদ্যারম্ভ। এই প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে বাবার ভূমিকা অপরিসীম এবং মায়ের শুধু উপস্থিতি থাকে, কিন্তু অনুষ্ঠানে তার কিছু বলার বা করার থাকে না।
শিশুকে মানুষ করার ব্যাপারেও বাঙালি লোকাচারে মায়ের ভূমিকা খুবই কম; মায়ের ভূমিকা শুধুমাত্র মাতৃত্বের যেখানে সে সন্তানকে খাদ্য দেবে এবং লালন পালন করবে কিন্তু তার ব্যাপারে কোনরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনভাবেই সম্ভব না। শিশুর লালন-পালনেও আনুষ্ঠানিক ছাড়া মায়ের কোন ভূমিকা সে সময়ের বাঙালি সমাজে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। শিক্ষা, তদারক, শাসন বা পেশাগত বিদ্যা, সবটাই নিয়ন্ত্রিত হয় শিশুর পিতার দ্বারা। মায়ের একমাত্র কাজ হল সন্তানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বিভিন্ন ব্রত করা।
বাঙালি লোকাচারে যে কটি সাহিত্যের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায় সেখানে বৈদিক সাহিত্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান লাভ করেছে। বৈদিক সাহিত্যেও সমাজ পুত্র সন্তানের প্রতি অত্যন্ত বেশি রকম ভাবে পক্ষপাত করে। এই সাহিত্য সরাসরি ভাবে বলে থাকে যে বন্ধ্যা নারীকে পরিত্যাগ করা উচিত যেহেতু তার ওপর নিরীতি ভর করেছে। যেহেতু মা হওয়া নারীর একমাত্র কর্তব্য তাই বন্ধা নারী সর্বক্ষেত্রে অশুভ এবং সমস্ত শুভ বিষয় কে সে নষ্ট করতে পারে। এমনকি এই সাহিত্যে বন্ধ্যা নারীকে পরিত্যাগের কথাও বলা হয়েছে। বন্ধ্যা নারীকে ১০ বছর পরে, মৃতবৎসা মাকে ১৫ বছর পরে, এবং কন্যা সন্তানের মাকে ১২ বছর পরে পরিত্যাগ করা যায়। এই সবকটি ক্ষেত্রেই কন্যা সন্তানের সামাজিক অবস্থান খুব ভালোভাবে নির্মিত বা বিশিষ্ট হয়েছে। তদানীন্তনকালে সমাজে নারীর বা ভালো নারীর লক্ষণ হল 'যে স্বামীকে সন্তুষ্ট করে, পুত্রের জন্ম দেয় এবং কখনো স্বামীর কথা, উত্তর করে না'।
পরবর্তীতে পুরানে ও ধর্মশাস্ত্রে সন্তান লাভের ইচ্ছুক নারীর জন্য বহুব্রতের প্রচলন হয়েছে। সেই সময় থেকে ষষ্ঠীর ধারণা বাঙালি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় যিনি সন্তান ধাত্রী দেবী। ষষ্ঠী ব্রত পালন করার উদ্দেশ্য হলো গর্ভধারণের ক্ষমতা বাড়ানো। জন্মের ঠিক ছয় দিন পরে আতুর ঘরে তার পুজো হয়। মনে করা হয় যে, তিনি সন্তানদের রক্ষা করেন এবং তার ওপরে সন্তান লাভের সবটা নির্ভর করে। তাই সন্তান লাভে ইচ্ছুক নারীকে তাকে তুষ্ট করতে নানান অনুষ্ঠান করা হয়। তাতে তিনি শিশুদের মঙ্গল করেন মনে করা হয়। শিশু যত ছোট হবে তার বিপদের আশঙ্কা তত বেশি; তাই গর্ভস্থ শিশুর বিপদের আশঙ্কা সবথেকে বেশি। এজন্যই ষষ্ঠীকল্প অনুষ্ঠান বিশেষ প্রয়োজন যা কিনা শিশুর মঙ্গল করে।
Yes
No
Written by
Atreyee Mukherjee
Get baby's diet chart, and growth tips
গর্ভাবস্থায় সবেদা খাওয়া কি উচিত?
বাঙালি জাতি: সমাজে কর্ম, ভূমিকা, এবং অবস্থান
বাঙালি সংস্কৃতিতে মাতৃত্ব
বাঙালি লোক কাহিনীতে মাতৃত্ব
বাঙালি লোকাচারে সন্তান এবং মাতৃত্ব
শিশুর মুখের ক্ষত বা মাউথ থ্রাশ
Mylo wins Forbes D2C Disruptor award
Mylo wins The Economic Times Promising Brands 2022
At Mylo, we help young parents raise happy and healthy families with our innovative new-age solutions:
baby test | test | baby lotions | baby soaps | baby shampoo |