Rituals & Customs
4 April 2023 আপডেট করা হয়েছে
এত ভঙ্গ বঙ্গ বঙ্গ দেশ তবু রঙ্গে ভরা
আচার বিচারও বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন রকম। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাংলা সংস্কৃতির আচার অনুষ্ঠান বংশ পরম্পরাগত এবং সনাতনী ভেষজ ভিত্তিক প্রতিকার ব্যবস্থায় মূল নির্ভরতা। প্রসবকালীন সময়ে যেহেতু বিভিন্ন রকমের জটিলতা দেখা যায় তাই বিভিন্ন ধরনের আচার অনুষ্ঠানের প্রকারভেদ এই বাংলা সংস্কৃতিতে বর্তমান, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কুসংস্কারভিত্তিক বলে মনে করা হয়। যদিও সব রকমের প্রতিকার মোটেই কুসংস্কার বলা যায় না বরং প্রতিকার, যা বাঙালি সনাতনী সংস্কৃতিতে নথিভুক্ত আছে তার উৎস বৈদিক যুগে। বৈদিক যুগ বাংলা সংস্কৃতির এক স্বর্ণ অধ্যায় যেখানে ধর্ম, যাদুবিদ্যা, সম্মোহন সঠিকভাবে মিলিত হয়েছে ভেষজ গুণের সাথে। অথর্ববেদ অনুযায়ী ভেষজ উপাদানসমূহ মন্ত্রের সঙ্গে মিলিত হয়েই প্রাচীনকালে মানুষের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সাহায্য করতো।
তিনটি প্রধান মৌলিক উপাদান সুস্বাস্থ্যের জন্য হল শ্লেষা, পিত্ত, ও বায়ুর সুষম সংমিশ্রণ - যা সঠিক খাদ্য গ্রহণে সম্ভব। খাদ্যকে আবার আয়ুর্বেদ দুভাগে ভাগ করেছে পানসে ও ঝাল। যেহেতু গর্ভাবস্থায় এবং প্রসব পরবর্তী অবস্থা জটিল এবং বিপদযুক্ত তাই সুষম খাদ্য গ্রহণ এই সময়ের সঠিক উপকরণ।
বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের ইতিবৃত্ত ব্যক্ত করেছে। সে সময় আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা এত উন্নত ছিল না; তাই ভেষজ উপকরণী ছিল মূল উপকরণ যে কোন রোগ প্রতিকারে অথবা প্রসব সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যায়। সে সময় খাদ্য সম্পর্কিত বাছ-বিচার, মন্ত্রপূত কবজের ব্যবহার, ধাতু, ঘি, মসলা, এবং উদ্ভিদ উপকরণ প্রসবের সঙ্গে জড়িত ছিল। বেশিরভাগ মানুষই মনে করত দোয়া পড়া তাবিজের এক অলৌকিক ক্ষমতা আছে গর্ভবতী মহিলা এবং অনাগত শিশুকে রক্ষা করার। শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান অথবা পুত করনের আচার অনুষ্ঠান ছাড়া হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে প্রসব সম্পর্কে অন্য কোন পার্থক্য বিশেষ লক্ষ্য করা যায় না।
শিশু এবং মা দুজনের জন্যই সংকরজনক বলে মনে করা হয়। তাই তাই গর্ভবতী মহিলাকে বিভিন্ন বাধা-নিষেধ মেনে চলতে বলা হয়। ধর্মীয় মতে এও বিশ্বাস করা হয় যে শিশুর বিকাশ ও গঠনে ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক বিধি বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। কথিত আছে যে যে কোন গ্রহণের সময় যৌন সঙ্গম করলে তা মৃত বাচ্চার বা বিকলাঙ্গ শিশু জন্মানোর কারণ হতে পারে। আবার এও বলা হয় যে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় জীব হত্যা কখনোই উচিত না; সে ক্ষেত্রেও একই ধরনের পরিণাম হতে পারে। বাংলার প্রাচীন আচার অনুযায়ী গোধূলি, দ্বীপ্রহর, বা উষকালে গর্ভবতী মহিলার বাইরে যাওয়া উচিত না কারণ ভূত, বা জিন এ সময়ে বেশি সক্রিয় থাকে বলে বিভিন্ন ধরনের অনিষ্ট করতে পারে। এই ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই গর্ভবতী মহিলাদের তাবিজ ধারণ করানো হতো যাতে ধর্মের মন্ত্র বা আয়াত, উদ্ভিদ সামগ্রী অথবা বিশেষ রেখাচিত্র রাখা হতো। অন্তঃস্থতা অবস্থায় মহিলারা বিভিন্ন খাবারের বিচার মেনে চলে। যেহেতু আগে বাড়িতেই প্রসব করানো হতো তাই বাচ্চা যদি খুব বড় হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে প্রসবের অসুবিধা হতে পারে তাই রসনা উদ্দীপক খাদ্য গর্ভবতী মহিলাকে বিশেষ দেওয়া হতো না। আধুনিক ওষুধ পত্রের ব্যবহার ও গ্রামাঞ্চলে বিশেষ হতো না বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে এই আশঙ্কার জন্য।
বাংলাদেশের পল্লী গ্রামে মহিলাদের প্রসব বেশিরভাগই বাড়িতেই করানো হতো; বয়স্ক মহিলা অথবা আত্মীয়র দ্বারা - যাদের বিশেষ অভিজ্ঞতা আছে প্রসব করানোয়। হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে এই প্রসব করানো হয় আলাদা ঘরে যথাযথ পর্দার আবরণ দিয়ে। হিন্দুরা সব ক্ষেত্রেই এজন্য আলাদা চালাঘর উঠোনে তৈরি করে আবার মুসলমানরা অনেক সময় চালাবৃত্ত রান্নাঘর কে পর্দা দিয়ে আংশিক ভাবে আলাদা করে প্রসবের জন্য ব্যবহার করে। মুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রসব মেঝের পেতে রাখা বেতের মাদুরে অথবা বিছানায় হতে পারে কিন্তু হিন্দু মহিলারা সবসময়ই ঘরের বিছানাতেই প্রসব করানোই বিশ্বাসী। তবে দু'ক্ষেত্রেই দুষ্টু আত্মাকে দূরে রাখার জন্য বিছানার নিচে ঝাঁটা, পুরনো জুতো, পুরনো ছুরি ইত্যাদি রাখা হয়। সরষে দানা কে মনে করা হয় পবিত্র তাই সরষে দানা আতুরের দোরে ছড়িয়ে রাখা হয়। যেহেতু ধাইমা বাইরে থেকে আসেন তাই তার পা ধুয়ে দেওয়া হয় আর এর মাধ্যমে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধাইমারা উবুয়ে বসে হাঁটু গেড়ে বসে বা শোয়া অবস্থায় প্রসব করাতেন। প্রসবের সময় দুধ বা চা পান অথবা জলপান শিশুর উল্টোদিকে নড়াচড়ায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে প্রসবকে বিপণমুক্ত করে। যেহেতু চিকিৎসা বিদ্যা সেসময়ের সেরকম উন্নত ছিল না তাই জটিলতা দেখা দিলে বিভিন্ন ধর্মীয় আচরণ অনুষ্ঠান যেমন মক্কা থেকে আনা জল অথবা পানি পড়া গর্ভবতী মহিলাকে পান করানো হতো এবং খানিকটা ভ্রূণের নাভি সংযোজন নালিতে ছিটানো হতো। খুব দরকার-এই একমাত্র হোমিওপ্যাথ বা কবিরাজকে ডাকা হতো। কখনো কখনো ধাইমা শিশুর নিরাপদ জন্ম গ্রহণের জন্য প্রসবদারের নিচে খোলা রাখতেন। আবার মুসলিমদের ক্ষেত্রে নিরাপদ প্রসবের জন্য তাবিজ কোমরে বাধা হতো; ঠিক সেরকমই আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা পশু জবাই করে অঙ্গীকার করা এক চলতি রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
Yes
No
Written by
Atreyee Mukherjee
Get baby's diet chart, and growth tips
Mylo wins Forbes D2C Disruptor award
Mylo wins The Economic Times Promising Brands 2022
At Mylo, we help young parents raise happy and healthy families with our innovative new-age solutions:
baby test | test | baby lotions | baby soaps | baby shampoo |