Pregnancy
4 April 2023 আপডেট করা হয়েছে
আজকের আধুনিক যুগে প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের সাহায্যে চিকিৎসা বিদ্যা অনেকটাই উন্নত। চিকিৎসা বিদ্যার উন্নতির সাথে সাথেই গর্ভবতী মা এবং অনাগত শিশুটির বিপদের ঝুঁকিও অনেকাংশেই কমেছে। কিন্তু এই সুবিধা আগের দিনের ছিল না। তাই সেকালের গর্ভাবস্থা অনেকাংশই ছিল বিপদযুক্ত। এখন যেমন ডাক্তার রা চিকিৎসা বিদ্যা পড়ে, যথেষ্ট জ্ঞান আহরণ করে, অভিজ্ঞতা অর্জন করে প্রসব করায় আগেকার দিনে শুধুমাত্র ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই ধাইমা রা প্রসব করাতো। তারা না পেতো সঠিক জ্ঞান আহরণের সুযোগ, নাই দরকারি সমস্ত প্রযুক্তি অথবা জিনিসপত্র। তাই সে সময় এমন অনেক সংস্কার মানুষের মনে জন্মেছিল, যেগুলির যুক্তিগত দিক থেকে এখনকার দিনে হয়তো কোনই ভিত্তি নেই। আবার এ কথা ও ঠিক গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলা এবং তার বাড়ির লোকজন অনেক সময় অনেক কুসংস্কারকেও প্রাধান্য দেয় শুধুমাত্র সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য। তাই বিভিন্ন যুক্তিহীনতা সত্ত্বেও কয়েকটি বাঙালি সংস্কার আজও মানা হয় পারিপার্শিকে। অনেক সময় এরকমও দাড়ায় শুধুমাত্র মানসিক দুর্বলতার জন্য একজন গর্ভবতী মহিলা বা তার চারপাশে আত্মীয় পরিজন বা পরিবারের লোকজন এইসব নিয়ম মানতে বলে যা সে নিজে যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে না বিচার করতে পারলেও মেনে নেয় ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করতে। এ কথা যেমন ঠিক যে যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে বিচার না করে এবং কোন কিছুর সত্যতা অনুধাবন না করে কোন জিনিস মেনে নেওয়া ঠিক নয় তেমনি একথাও ঠিক, যুক্তি বুদ্ধির ওপরেও মানবিকতা বা মানসিক দুর্বলতা অনেক সময় মাথার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। সেরকমই কিছু নিয়ম আজকের আলোচ্য বিষয় যেটা দিয়ে দেখা হবে আদৌ কোন যুক্তি এর পেছনে আছে কিনা।
আগেকার দিনে মা ঠাকুমারা গর্ভবতী মহিলাকে গঙ্গা পারাপারে নিষেধ করতেন। তারা বলতেন লোকাচারে গঙ্গা পারাপারকে গর্ভাবস্থায় নিষেধ করা হয়েছে। প্রথাগত শিক্ষার প্রচলন যেহেতু সে সময় ছিল না, তাই লোকাচারকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হতো; তাই কেউই যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে এর কারণ অনুধাবন করার চেষ্টা মোটেও করত না। বরং এই ভেবেই নিশ্চিন্তে থাকত যে যদি গঙ্গা পার না করে শিশু এবং মাকে সুরক্ষিত করা যায় তাহলে তা না করাই ভালো। এই চিন্তাভাবনা থেকেই কেউ যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে এ ধরনের লোকাচারকে বিচার করার কথা ভাবেও নি। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বিজ্ঞানের যুগে এখন সব মহিলাই সবকিছুকে যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে আলোচনা করেই গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে গঙ্গা পারাপারে নিষেধের কারণকে সুরক্ষার উপায় স্বর ূপ বলেই বিবেচনা করা যেতে পারে। চিকিৎসা বিদ্যাতেও ডাক্তাররা বারবারই বলেন এ সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের উচিত নিজের প্রতি এবং অনাগত সন্তানের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং যতটা সম্ভব বিপম্মুক্ত থাকা। ঠিক সেজন্যেই সব রকমের যানবাহন বিশেষ করে যে যানবাহনে ঝাঁকুনি বেশি হয় বা উঁচু-নিচু রাস্তায় হাটা ডাক্তাররা এ সময় গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে নিষেধ করে। গঙ্গা পারাপারের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন রকমের ঝুঁকি থেকেই যায় - যেমন নৌকা বা লঞ্চে ওঠা বা নামার ক্ষেত্রে শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে জলে পড়ে যাওয়া বা অন্য ধরনের বিপদ হতেই পারে তাই সাবধানতা অবলম্বন করার জন্যই এ সময় গঙ্গা পারাপারে বিরত থাকাই ভালো।
আগেকার দিনে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে শুদ্ধাচারে বানানো খাবারই দেওয়া হতো এই ভেবে যে কোনভাবেই যেন ঋনাত্মক শক্তি কোনরকম বিপদের সম্ভাবনা না ঘটায়। বাঙালির গ্রাম্য জীবনে বিভিন্ন ধরনের অপদেবতা বা ঋণাত্মক শক্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। তাই কোনভাবে বানানো খাবার যদি মৃত ব্যক্তি বা মৃত ব্যক্তির পরিবারবর্গের ছোঁয়ার মধ্যেও এসে যায় তাহলে সে খাবার গর্ভবতী মহিলাকে আর দেওয়া হয় না। এই যুক্তি একবিংশ শতাব্দীতে বড়ই বেমানান তবুও সংস্কারের দিক দিয়ে বিচার করে এটা দেখা যেতে পারে যে এই লোকাচারের পিছনে মূল কারণ কি। বলা হয় জন্ম মানে শুভ সূচনা অন্যদিকে মৃত্যু মানে শোক সংবাদ। তাই এই লোকাচারকে এভাবে বিশ্লেষণ করাই যেতে পারে, যে কোন কিছুর শুভ সূচনা কোনভাবেই শোকসংবাদের সংস্পর্শে না হওয়াই ভালো। এটা না মানলে কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা যেমন নেই তেমনি মানলে কোন কিছু খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাও নেই তাই যুক্তি বুদ্ধির বিশ্লেষণে এ লোকাচার কে সংস্কারের অঙ্গ বলে মেনে নেওয়া যেতেই পারে।
কথিত আছে সেকালে গর্ভবতী মহিলাদের জোড় মাসে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি বা বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ায় নিষেধ করা হতো। এই লোকাচারের কোন সঠিক কারণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বের করা সত্যিই অসম্ভব। যাত্রায় বারণ করার কারণ থাকতেই পারে সুরক্ষা এবং সুনিশ্চিততার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কিন্তু কোনভাবেই তার সঙ্গে জোড় মাসের সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব নয়। তাই সেকালের এই নির্দিষ্ট লোকাচারটিকে সম্পূর্ণভাবে যুক্তিহীন বলে বিবেচনা করা যেতেই পারে এবং এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে এ ধরনের লোকাচার মানা বা মেনে নেওয়া কোনটাই সে অর্থে সম্ভব নয়।
শুনতে খুব হাস্যকর লাগলেও সেকালে গর্ভবতী মহিলাকে কালী মন্দিরে যেতে দেওয়া হতো না। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে অপদেবতার ভয়ে বা ঋনাত্মক শক্তির থেকে দূরে থাকার জন্য সন্ধ্যেবেলা বেরোনো, বাইরের খাবার খাওয়া এগুলো নয় মেনে নেওয়া যেতেই পারে কিন্তু কালীমন্দির যেহেতু দেবীর স্থান সেখানে কি সমস্যা? প্রাচীন বাংলায় মেয়েকে সবসময় লক্ষ্মীরূপে দেখা হয়েছে বা মেয়ে মানেই তার লক্ষীর মতন শান্ত শিষ্ট হাবভাব হবে এটাই ধরে নেওয়া হতো আর এটাও ভাবা হতো যে মেয়ের গায়ের রং অবশ্যম্ভবভাবে ফর্সা হতে হবে যাতে বিয়ের সময় বাবার বোঝা কিছুটা কমে। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে এই লোকাচারের কারণ অনুধাবন করা মোটেই অসম্ভব নয়। কালি ঠাকুর দেবী হলেও কালো এবং রুদ্রমূর্তির প্রতিভু। কালী মন্দিরে গেলে যদি এই রুদ্র দেবীর কালো রূপের প্রভাব অনাগত শিশু সন্তানটির ওপরে পড়ে তাই কালীমন্দিরে যাওয়া থেকে গর্ভবতী মহিলাকে বিরত থাকতে হতো যাতে কোনোভাবেই একটি মেয়ে কালো এবং প্রতিবাদী হিসেবে জন্মগ্রহণ না করে। এ লোকাচার নেহাতই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এক নিদর্শন।
Yes
No
Written by
Atreyee Mukherjee
Get baby's diet chart, and growth tips
Mylo wins Forbes D2C Disruptor award
Mylo wins The Economic Times Promising Brands 2022
At Mylo, we help young parents raise happy and healthy families with our innovative new-age solutions:
baby test | test | baby lotions | baby soaps | baby shampoo |