Pregnancy
5 April 2023 আপডেট করা হয়েছে
বাঙালি সংস্কৃতিতে মায়ের জায়গা একটি বিশেষ জায়গা এবং এই জায়গাটি তৈরি হয়েছে কারণ মা এমন একজন মানুষ যে একটি সন্তানের জন্য বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে। কিন্তু কোন কিছুই অবিমিশ্র শুভ বা অশুভ হতে পারে না। ঠিক সেরকমই বাঙালি সংস্কৃতির মাতৃত্বেও কিছু এমন জিনিস আছে যেগুলো পরিবর্তন করা খুবই দরকারি কারণ এগুলোর ঋণাত্মক প্রভাব সন্তানের উপরে পড়ে।
আধুনিক যুগে বেশিরভাগ বাচ্চাই সবকিছু যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করে মানতে চায়। আবার উল্টোদিকে এখন মেয়ে মানে বিয়ে করতে হবে এই ধারণাটাও বস্তা পচা হয়ে গেছে। তাই সংস্কৃতির এই ধরনের অযৌক্তিক প্রথাগুলোকে যতটা সম্ভব বাদ দিতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাঙালি মায়েরা যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে কিছু যাচাই না করেই সেটা সন্তানের উপর চাপিয়ে দিতে যায় এবং তার ফলে সন্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি হয় এবং মা আর সন্তানের সম্পর্ক বাজেভাবে প্রভাবিত হয়। তাই এই বিষয়গুলি জানা থাকলে এই ধরনের সমস্যা এড়ানো যাবে এবং মাতৃত্বের সংজ্ঞা বা মা আর সন্তানের সম্পর্ক আরো সুন্দর হয়ে উঠবে।
অনেক সময় বাঙালি মাকে দেখা যায় তার মেয়ে একটু বড় হওয়ার পরেই তাকে সোমবারের ব্রত বা শিব চতুর্দশী করার জন্য জোর করতে। কথিত আছে যে শিব চতুর্দশী করলে বা সোমবারের ব্রত করলে শিবের মতন বর পাওয়া যায়। এই ধরনের কুসংস্কার আজকের যুগে দাঁড়িয়ে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয় আবার উল্টোদিকে এটাও ঠিক। যে একটি মেয়ে এখন সবার আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়, প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। তাই খুব ছোট থেকেই বর পাওয়ার এই যে আকাঙ্ক্ষা এটা তার মধ্যে না ঢোকানোই ভালো। এটা তার এগনোর পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এখন যুক্তিযুক্ত দিকে বা পৌরাণিকভাবে যদি এই সংস্কারটি বিশ্লেষণ করা যায় সে ক্ষেত্রেও এই সংস্কারটিকে কোনভাবেই প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। পৌরাণিক মতে দেখা যায় শিব আপন ভোলা এবং সংসারের কোন কিছুতেই তার কিছু যায় আসে না বা কোন লক্ষ্যই সে রাখেনা; বরং সবকিছুই দেবী দুর্গাকে সামলাতে হয় তার স্ত্রী হিসাবে কিন্তু এখনকার ধারণায় একটি সংসারে স্বামী এবং স্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং সমান ভূমিকা তাই শিবের মতন বর পাওয়ার অর্থ হল এমন একজন মানুষকে বিয়ে করা যে সংসার জীবনের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন এবং খুব পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে দায়িত্বজ্ঞানহীন তাই বাঙালি মায়েদের অবশ্যই ভাবে উচিত এ কথাটা মনে রাখা যে মেয়েকে কখনোই ছোট থেকে সোমবারের ব্রত বা শিব চতুর্দশী করার জন্য জোর না করা।
বাঙালি সংস্কারে বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার। সম্মান প্রদর্শন করার জন্য বাঙালি মা সবসময়ই তার সন্তানকে বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে জোর করে। এই সম্মান প্রদর্শন শুধুমাত্র সম্মান বা শ্রদ্ধার মধ্যেই আটকে থাকে না, বরং এই রীতির মধ্য দিয়ে যাকে প্রণাম করা হচ্ছে বা প্রণাম করার কথা হচ্ছে, তিনি শিশুটির এবং শিশুটির পরিবারের সব রকমের সংস্কার, লালন পালন ইত্যাদির তুলনামূল্য বিচার করে থাকেন। এখন একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে যুক্তি বুদ্ধির প্রয়োগ করা খুবই প্রয়োজন। চেনা-অচেনা, অল্প চেনা, কাছের মানুষ কারোরই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার মানেই তাকে সম্মান প্রদর্শন করা যায় না বরং সম্মানটা আসে মনের ভেতর থেকে। তাই সন্তানকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার জন্য জোর করার বদলে বড়দের কে সত্যিকারের সম্মান করতে শেখানোটাই বেশি জরুরী। আবার উল্টোদিকে এটাও ঠিক যে, কোন মানুষ যে বাইরে থেকে আসছে, তার পায়ে বাইরের ধুলো, জীবাণু ইত্যাদি খুব স্বাভাবিকভাবেই লেগে থাকে। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার মাধ্যমে শিশুটিও সেই জীবাণু বা ধুলোর সংস্পর্শে চলে আসে এবং বেখেয়ালে অনেক সময় হাত ধুতে ভুলে যায়। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্যও শিশুকে সবসময় পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার জন্য জোর না করাই ভালো। বাঙালি প্রথা আছে দুহাত জোড় করে প্রণাম জানানো; যেটা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্তরেও ব্যবহৃত হয় সৌজন্যতার খাতিরে। সুতরাং সম্মান প্রদর্শন করার জন্য শুধুমাত্র যে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে হবে তা নয়, বরং জোড় হাত করে অভিবাদন জানিয়েও প্রণাম বা সম্মান দুইই করা যায়।
মায়েদের সবসময় উচিত শিশুকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা এবং সে ক্ষেত্রে শিশুকে উদার মনস্ক এবং বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলাই বেশি ভালো। আর তাই জন্যেই তাকে যতটা সম্ভব কুসংস্কার থেকে দূরে রাখতে হবে। এর মানে এই নয় যে, শিশুকে বাঙালি প্রথা, ঐতিহ্য কোন কিছুর সম্পর্কে জানানো হবে না, বরং এটা জরুরী যে সে যেন সত্যিকারের বাঙালি ঐতিহ্যকে খুঁজে নিতে এবং বুঝতে শিখে যায় নিজে থেকেই। বাঙালি ঐতিহ্যে কুসংস্কারে কোনই জায়গা নেই; শুধুমাত্র দরকার চোখ, কান খোলা রেখে আসল সম্পদটা খুঁজে নেওয়া আর সেক্ষেত্রে মা-ই হতে পারে সব থেকে ভালো নির্দেশক।
একজন মায়ের দায়িত্ব বা কর্তব্য হচ্ছে শিশুকে যথাযথভাবে বড় করে তোলা এবং তাকে এমন ভাবে তৈরি করা যাতে সে নিজের সমস্যার সমাধান বা জীবন যুদ্ধে যে কোন রকম সমস্যাকে সহজেই সামলে নিতে পারে। তাই এক্ষেত্রে শিশুদের স্বনির্ভরতা যেমন জরুরী তেমনি শিশু যেন মাকে ভরসার আশ্রয়স্থল হিসেবেই মনে করতে পারে সেটা দেখাও জরুরী। তাই সবসময় আদেশ করার পরিবর্তে তাকে বুঝিয়ে বলাটাই বেশি ভালো।
বেশিরভাগ বাঙালি বাচ্চাকেই তার মায়েদের কাছে এটা সব সময় প্রায় শুনতে হয় যে সে বড় হয়ে গেছে, তাই তাকে এরকম করতে নেই। এই ধরনের কথা শিশুর মনে চাপ সৃষ্টি করে। তাই তাকে আদেশ করার বদলে বুঝিয়ে বলা অনেক বেশি বুদ্ধিমানের কাজ; বুঝিয়ে বলার থেকে আবার কাজের মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া আরো ভালো। বড় হওয়ার সাথে সাথেই তাকে যদি কিছু দায়িত্ব দেওয়া হতে থাকে তার বয়স অনুযায়ী, তাহলে এই কথাটি তাকে বলার আর দরকার পড়ে না। কারণ সে নিজেই বুঝতে শিখে যায় যে সে বড় হয়ে গেছে এবং কিছু কিছু কাজ তার করা ভালো দেখায় না।
বাঙালি মায়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত সাবধানী এবং সন্তানের ক্ষেত্রে এই সাবধানতা বেশিরভাগ সময়ই অত্যাচারের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর প্রতিটি বাচ্চাই এটা বুঝতে শিখে যায় যে, তার ঠান্ডা লাগছে না গরম লাগছে তাই এরকম ক্ষেত্রে সব সময় তাকে যদি আদেশ দেওয়া হয় তার পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে, তাহলে শুধু যে সেটা তার কাছে বিরক্তিকর হয়ে যায় তাই নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই এটা তাকে তার মায়ের প্রতি বিরূপ করে তোলে। তাই সবসময় তাকে বিভিন্ন জিনিস পরার প্রতি জোর করার থেকে প্রত্যেকটি জিনিসের উপকারিতা এবং অপকারিতা উদাহরণসহ বুঝিয়ে দেওয়াই ভালো। এক্ষেত্রে সে নিজে নিজেই পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিকঠাক জামা জুতো পড়তে শিখে যায়। এরকমভাবেই খাবারের প্রতিও সব সময় তাকে বারণ করা বা নিষেধ করা উচিত না। বিশেষ করে সেই সব সন্তানদের ক্ষেত্রে যারা সদ্য কৈশোরে পৌঁছেছে। বেশিরভাগ বাঙালি মায়েরাই সন্তানদের সবসময় আইসক্রিম খেওনা, বাইরের জিনিস খেও না ইত্যাদি বলেন। প্রত্যেকটি জিনিস আলাদা আলাদা করে বারণ করার থেকে বাচ্চাটিকে ছোট থেকেই ঘরের খাবারের প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং একটু বড় হওয়ার পর বাইরের খাবারের অপকারিতা সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া বেশি কার্যকরী হতে পারে কারণ এক্ষেত্রে বাচ্চাটি নিজেই বুঝা যায় যে কখন কি করা উচিত, কখন কি পরা উচিত, এবং কখন কি খাওয়া উচিত। অপকারিতা বুঝিয়ে দেওয়া মানে এই নয় যে, সে কোন সময়ই বাইরের খাবার খাবে না কিন্তু এটা অবশ্যই নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সে অন্তত এটুকু বুঝবে যে রোজ বাইরের খাবার খাওয়া বা খাবার খাওয়ার বায়না করা ঠিক না।
বাঙালির মায়েদের একটা খুব বাজে অভ্যাস হচ্ছে সন্তানকে অতিরিক্ত প্রশ্ন করা। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সন্তানেরা এ প্রশ্ন করার অভ্যাসটাকে খুবই ঋণাত্মকভাবে নেয়। এবং এর ফলে তাদের মনে মায়ের প্রতি একটা বিরূপতা সৃষ্টি হয়। মা হিসেবে প্রশ্ন করা কখনোই অন্যায় নয়, কিন্তু সঙ্গে এটাও বোঝা উচিত যে, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার নিজের ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়। তাই সব সময় সব প্রশ্ন তার ব্যক্তিত্বকে আঘাত দেয়, যা তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয় বা বিরক্ত করে দেয়। খুব সাধারণ প্রশ্ন বাঙালি মায়েদের ক্ষেত্রে ছুটি মানে কি পড়াশোনা বন্ধ বা কোথায় আছিস, কখন ইত্যাদি। ছুটি মানেই যে পড়াশোনা বন্ধ নয়, সেটা সব সময় মুখে বলে মনে করিয়ে না দিয়ে একটা সুন্দর উদাহরণ দিয়ে তাকে যদি বুঝিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে এই প্রশ্ন বারবার করার দরকার পড়বে না। আবার এটাও ঠিক ছুটি কথাটির অর্থই হচ্ছে মুক্তি। তাই কিছু কিছু সময় সন্তান যদি পড়াশোনা বন্ধ করেও থাকে ছুটিতে, সেটা মেনে নিতে হবে বা চেষ্টা করতে হবে সেই সময়টা যেন কোনো ভালো কাজে বা শিক্ষণীয় কোন বিষয়ে ব্যবহার করা হয় এবং এক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ
বাঙালি মায়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে এখনকার দিনে সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে নিজের সন্তানকে সবসময়ই সব থেকে উপরে দেখতে চাওয়া এটা অনেক ক্ষেত্রেই শিশুর মনে এতটাই চাপ সৃষ্টি করে যে তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতেও ভুলে যায়। বারংবার যদি একটি শিশুকে প্রশ্ন করা হয় যে ক্লাসে ফার্স্ট কে হল? তাহলে পক্ষান্তরে তাকে বারবার তার অপারগতা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। এই ধরনের প্রতিযোগিতা পূর্ণ মনোভাব সন্তানের মধ্যে সৃষ্টি করা একজন মায়ের পক্ষে কখনোই উচিত কাজ নয় বরং একজন মায়ের উচিত তার সন্তানকে সব সময় সুস্থ প্রতিযোগিতায় উৎসাহী করতে যেখানে সেই শিশুটি সবসময় চেষ্টা করবে নিজেকে উন্নত করার। অন্যের থেকে ভালো হওয়ার থেকে সবসময়ই নিজেকে আরো ভালো জায়গায় দাঁড় করানো বৃহত্তর ক্ষেত্রে সাফল্য এনে দেয়। তাই বাঙালি মায়েদের উচিত একটা গণ্ডির মধ্যে প্রতিযোগিতা না করে সবসময় বৃহত্তর ক্ষেত্র কে ধরে সন্তানকে প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করে দেওয়া
Yes
No
Written by
Atreyee Mukherjee
Get baby's diet chart, and growth tips
প্রসবকালীন আচার - প্রারম্ভিক পর্ব
সি-সেকশনের কত সময় পর আপনার যৌন মিলন করা উচিত?
পুত্রের থেকে মা-র সম্মান
পাইলোনাইডাল সিস্ট কী? এর কারণ, চিকিৎসা ও উপসর্গ
গর্ভাবস্থায় কেন আপনার সাবুদানা খাওয়া উচিত?
প্রতিদিন আপনার মুখে ভিটামিন-সি ফেস টোনার ব্যবহার করার সেরা 5টি সুবিধা
Mylo wins Forbes D2C Disruptor award
Mylo wins The Economic Times Promising Brands 2022
At Mylo, we help young parents raise happy and healthy families with our innovative new-age solutions:
baby test | test | baby lotions | baby soaps | baby shampoo |